মোঃ সাইদুল ইসলাম

মডেল ডেইরি খামারি

পোতাজিয়ার কুদরত আলীর ছেলে মোঃ সাইদুল ইসলাম একজন সফল খামারী । তার খামারে বর্তমান ১৫টা গাভী এবং ৭টা বকনা আছে। ছোট বেলা থেকেই তার ছিল ডেইরী ফার্ম করার স্বপ্ন কিন্তু গরুর রোগের প্রতি ছিল তার প্রচন্ড ভয়। তাদের খামারে অসুস্থতার কারণে অনেক সময় গরুর মৃত্যু হতো। ফলে তিনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতেন। গবাদী প্রাণিচিকিৎসার ব্যাপারে ডেইরী ক্লাস্টারে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বাড়িতে কোন গরু অসুস্থ হলে ডাক্তার নিয়ে আসার কাজটা সাইদুলই করতো আগে। তখন ডাক্তারের ছিল খুব স্বল্পতা, সঠিক সময়ে ডাক্তার পাওয়াটা ছিল খুবই দুস্কর। এমন ও সময় হয়েছিল যে সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে খামারে অনেক সময় গরু মারা যেত । তখন থেকেই সাইদুলের মনে ইচ্ছা জাগে পল্লী প্রাণিচিকিৎসক হওয়া । বাড়িতে কোন গরুর অসুখ হলে ডাক্তার কি চিকিৎসা দেন তা লক্ষ্য করতেন। জ¦র মাপা, শ^াস—প্রশ^াস নেওয়ার অবস্থা বুঝা, এমন কি ডাক্তার কিভাবে গাভীকে ইনজেকশন দেয় তা সাইদুল খুবই গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করতেন। ফলে ছোট বেলা হতেই গরুর কাছে যেতে যেতেই তার ভয় অনেক কমে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেইরী এলাকায় গরুগুলোকে ইনজেকশন পুশ করতে শিখেন। এ কাজে আগ্রহ ও অভিজ্ঞতার জন্য স্থানীয় নাফিসা ফার্মেসীতে মাঝে মাঝে বসে ঔষধ সম্বন্ধে ধারণা নেন। ২০০৫ সালে “এইম বাংলাদেশ” নামে উল্লাপাড়ায় তৎকালীন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সানাউল্লাহ স্যারের সহযোগিতায় ৬ মাসের গবাদী প্রাণির প্রাথমিক চিকিৎসা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন। এছাড়া বিশিষ্ট প্রাণিচিকিৎসক গোলজার স্যার (ডিভিএম), আব্দুল হাই স্যার (ডিভিএম), মিল্কভিটার ডাঃ বাবুল আকতার, ডাঃ পংকজ এবং এনডিপি এসইপি ডেইরী প্রকল্পের ডাক্তারদের পরামর্শে আধুনিক চিকিৎসা বিষয়ে ধারণা লাভ করেন। এরপর আত্মবিশ^াস বেড়ে যাওয়ায় “ সিয়াম ফার্মেসী ” নামে ভেটেরিনারী ওষুধের দোকান দেন। এসইপি ডেইরী প্রকল্পের আয়বর্ধকমূলক কমন সার্ভিসের আওতায় ৬,০০,০০০/— টাকা ঋণ নিয়ে ঔষুধের দোকানে ওষুধ ক্রয় করে ব্যবসা করতে থাকেন। এছাড়া পিকেএসএফ এর আর্থিক সহযোগিতায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট —এসইপি—ডেইরী প্রকল্পের আওতায় লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে লব্ধ চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞান এলাকায় খামারীদের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা করে, ফলে এখন খামারীরা গর্ভবতী গাভীকে তিনমাস পরপর কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াচ্ছে, নিয়মিত টিকা দিচ্ছে, ভিটামিন,ক্যালসিয়াম, জিংক খাওয়াচ্ছে, সারা বছর কাঁচাঘাসের আবাদ করার চেষ্টা করছে এবং গোয়ালঘর নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করছে। ফলে গোয়াল ঘরের পরিবেশ ভাল থাকছে , রোগ—ব্যাধি কম হচ্ছে, গবাদী প্রাণীর মৃত্যুহার কমেছে। দুধ দোহনের পর গাভীকে খেতে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় গাভীর ওলান প্রদাহ কমে গেছে , গাভীর দুধ উৎপাদন বেড়েছে ,রিপিট ব্রিডিং এর সমস্যা কমেছে। খামারীর আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সাইদুলের আয় এবং সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে এবং এসইপি প্রকল্পের একজন মডেল এলএসপি হিসাবে ডেইরী ক্লাস্টারে পরিচিতি লাভ করেছে । এতে করে পরিবেশ বান্ধব ডেইরী খামার গড়ে উঠছে দুধের রাজধানী শাহজাদপুরে। তিনি এসইপি প্রকল্প হতে অনুদানের মাধ্যমে দুগ্ধদোহন মেশিন গ্রহণ করেছেন। তার খামারটিতে আধুনিক পদ্ধতিতে দুগ্ধ দোহনের প্রয়াস চলছে, এতে ওলান প্রদাহ সহ অন্যান্য সমস্যা গুলো হ্রাস পেয়েছে এবং শ্রমিক খরচ অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে।