
মোঃ আতাউর রহমান
কৃষক ডেইরি ফুড অ্যান্ড প্রোডাক্টস
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার হালুয়াগাতী গ্রামে মোঃ আতাউর রহমানের জন্ম। আতাউরের বাবা ছিলেন কাঁচামালের ব্যাবসায়ী , আয় ইনকাম খুব একটা ভাল ছিল না। তারা ছিলেন ৪ ভাই ৩ বোন। ছোট বেলায় পড়াশোনা করার জন্য বিদ্যালয়ে পাঠালেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ না থাকায় বিদ্যালয়ে না গিয়ে বাবার ব্যবসায় বসতেন। ছোট বেলা থেকেই তার স্বাধীনভাবে ব্যাবসা করার মানসিকতা ছিল। কিন্তু পুঁজি না থাকায় বাধ্য হয়েই হাটে হাটে কুলি ও দিন মজুরের কাজ করেছেন। এতে দিনে প্রায় ৫০/৬০ টাকা আয় হতো। স্থানীয় কাপড় ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় হতে লাগল। এক সময় মহাজনদের কাছ থেকে ২/৩ পেটি কাপড় নিয়ে বিক্রি করে লভ্যাংশ পেতে শুরু করেন। এতে প্রতি হাটেই প্রায় ৪০০/৫০০ টাকা লাভ হতে থাকে। এক সময় তিনি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যাবসা করা শুরু করলেন। লাভের টাকা হতেই তিনি পর্যায়ক্রমে ৩টা দোকান ভাড়া নেন। হঠাৎ করে ব্যাবসা মন্দা হওয়ায় এখন একটা দোকানে কাপড়ের ব্যাবসা চালিয়ে যান। তাহার বাড়িতে ৫/৬ টা গাভী ছিল, সেটা নিয়ে পরবর্তীতে নতুন করে ব্যাবসা শুরু করেন। গোয়ালারা দুধ নিয়ে বিক্রি করতো বিভিন্ন মিষ্টির দোকান গুলোতে। দুধের ন্যায্য মূল্য যাতে খামারীরা ঠিক মত পায় তার জন্য ২০১৫ সালে মিল্কভিটার অধীনে নিবার্চন করে বাড়াবিল দুগ্ধ সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে মাত্র ৩ লাখ টাকা পঁুজি নিয়ে ছোট পরিসরে চিজ উৎপাদন করার কাজ চালু করেন। কিন্তু বিএসটিআই, পরিবেশ ছাড়পত্র এবং ফুড লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত চাপে থাকতেন। ২০২১ সালে পিকেএসএফ এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) এর বাস্তবায়নে সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)—ডেইরী ফার্ম প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন। পরবর্তীতে সাধারণ সেবার আওতায় ২,০০,০০০/= টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। আতাউর গতানুগতিক ধারায় তাদের ব্যাবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। তিনি কখনো তার কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনায় নিজেদের ও শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন তথা টেকসই ব্যাবসায়িক ধারণা নিয়ে চিন্তা—ভাবনা করেননি। ফলশ্রুতিতে তাদের অজান্তেই তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যাসহ আরও নানান জটিলতায় ভুগতে থাকে। এ সমস্ত স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি তারা কখনো তাদের কারখানায় বিদ্যমান বিভিন্ন ঝুঁকি যেমন, অগ্নি দূর্ঘটনা, মাথার উপর ভারী বস্তু ছিঁড়ে পড়ার ঝঁুকি, চলমান মেশিনে সংঘটিত কোন দূর্ঘটনার ঝঁুকি প্রশমনে কোন প্রকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ভাবেননি এমনকি কখনোই তার মনে হয়নি তাদের ব্যবসা ক্ষেত্রে এই বিষয় গুলোর কোন দরকার আছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও পিকেএসএফের অর্থায়ন ও এনডিপি কর্তৃক বাস্তবায়িত সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের (এসইপি) ঋণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আতাউর উল্লিখিত বিষয় সমূহের গুরুত্ব এনডিপির (এসইপি) কর্মকর্তাদের পরিচালিত বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জানতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। চলমান প্রকল্পের আওতায় ঋণ গ্রহণ করে তার কারখানায় পরিবেশবান্ধব অনুশীলনের চর্চা শুরু করেন। এনডিপির এসইপি প্রকল্পের অফিসাররা প্রতিনিয়ত পরিবেশ উন্নয়নের ব্যাপারে কথা বলায়, এক পর্যায়ে বিষয়টির গূরুত্ব উপলব্ধি করে প্রথমে কারখানায় ড্রেন তৈরী, অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার স্থাপন, নেটিং ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সের ব্যবস্থা সহ শ্রমিকদের বিশ্রাম ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন। এতে শ্রমিকেরা স¦াচ্ছন্ধে দীর্ঘ সময় কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ পান, ফলে উৎপাদন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি হতে থাকে এবং তার ব্যাবসা লাভজনক হয়। বর্তমানে ব্যবসার পরিস্থিতি তিনি জানান, প্রতিদিন ২২০০ লিটার দুধ নিয়ে কারবার চলছে । বর্তমানে ৬ জন কর্মচারী কাজ করছে তাদের মাসিক বেতন প্রায় ১০০০০/= করে। এসইপি প্রকল্পের অনুদান ও সার্বিক সহযোগিতায় বিএসটিআই , পরিবেশ ছাড়পত্র এবং ফুড লাইসেন্স লাভ করায় প্রশাসনের দৃষ্টি কাড়ে এবং পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ এনডিপি এসইপি প্রকল্পের মাধ্যমে জানতে পারেন আতাউরের দুগ্ধপণ্যের সরকারী সকল ধরনের লাইসেন্স, উন্নত মোড়কজাতকরণ ও ব্র্যান্ডিং এবং পরিবেশবান্ধব পরিবেশে পণ্য উৎপাদনের কথা। উল্লেখিত বৈশিষ্টের প্রক্ষিতে গত ১লা জুন ২০২৩ জাতীয় পর্যায়ে “ডেইরী আইকন” পুরুষ্কার লাভ করেন।
তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানান যে, দুধ একটা পবিত্র এবং আদর্শ খাদ্য। পরিবেশ সম্মত আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে উন্নত ও নিরাপদ দুগ্ধজাত পণ্য তৈরী করে ভোক্তার কাছে সীমিত লাভে পৌঁছানো যাহা সুষ্ঠ ও কর্মঠ জাতি তৈরীতে ভূমিকা রাখতে পারে।