কায়ছার আলম তালুকদার

এম এম এইছ তালুকদার ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস

 

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের নুকালী গ্রামের মৃত মহসীন হোসেন তালুকদারের মেজ ছেলে কায়ছার আলম তালুকদার এখন দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারীদের মধ্যে অন্যতম। ২৭ বছর ধরে তিনি নানা ঘাত—প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ব্যবসা করলেও বর্তমানে তিনি একজন প্রসিদ্ধ উদ্যোক্তা। প্রতিদিন প্রায় ১০০০০ লিটার দুধ দিয়ে দুগ্ধজাত পণ্য ঘি, লাবান, ক্রীম, চিজ, দই তৈরী করে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
বাবা ছিলেন রেশনের ডিলার, অন্য ভাইয়েরা চাকুরী করলেও কায়ছারকে চাকুরীর প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা যায়নি। ১৯৯৬ সালে ডিগ্রী পাশ করার পরই বিখ্যাত বিক্রমপুর ডেইরী শপের মালিক স্বপন কুমার ঘোষের মাধ্যমে তার ব্যাবসার হাতেখড়ি। ঐ সময় শীতলীকরণের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০০০—৪০০০ লিটার দুধ ঠান্ডা করে ঢাকায় সরবরাহ করতেন। তিনি চাকুরীর সুযোগ পাওয়ার পরও চাকুরী না করে লিটার প্রতি ০.৫০ টাকা কমিশনে ব্যাবসা করতেন। এতে সপ্তাহে ১০—১২ হাজার টাকা আয় করেন। এভাবে ৩ বছর ব্যবসা চলার পর স্বপন কুমার ঘোষ পারিবারিক কারণে ব্যবসা বন্ধ করলে তিনি ডিলারশীপ নিয়ে মিল্কভিটার সঙ্গে প্যাকেজিং এবং কেমিক্যাল সাপ্লাই ব্যাবসা শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যে ব্যাবসায়িক কারণে বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক হওয়ায়, দুগ্ধজাত পণ্য ঢাকায় মার্কেটিং এর কিছুটা সুযোগ পান। বছর তিনেক ব্যবসা করার পর রাজনৈতিক ও বিভিন্ন কারণে ব্যাবসায় ঝঁুকি আসে, ফলে মিল্কভিটার সঙ্গে ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই চিন্তা করেন দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন।
নিজস্ব জায়গায় শীতলীকরণ যন্ত্রপাতি কিনে ব্যবসা শুরু করেন। মিল্কভিটার সঙ্গে যুক্ত থাকার সময় ঢাকার বিভিন্ন কম্পানীর সঙ্গে পরিচিতি হয় । পরবর্তীতে ইগলু , আকবরিয়া কম্পানীতে দুধ সরবরাহ করার কাজ পাওয়ায় দুধের চাহিদা বাড়তে থাকে।
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তার অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিলো বিএসটিআই, পরিবেশ ছাড়পত্র এবং ফুড লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চাপ আসত। ২০২১ সালে পিকেএসএফ এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) এর বাস্তবায়নে সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)—ডেইরী ফার্ম প্রকল্পের আওতায় পণ্যের বিএসটিআই, উচ্চ মানসম্মত পণ্য তৈরীর কারিগরি সহযোগিতা এবং পরিবেশ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পাওয়ার ফলে এখন তার কারখানায় ফ্লাই ক্যাচার, ডাস্টবিন, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা, সৌর বিদ্যুৎ , স্বাস্থ্যকর টয়লেট, ভেন্টিলেশন সুবিধা থাকায় কর্মচারীরা স্বাচ্ছন্নভাবে কাজ করায় দৈনিক প্রায় ৫০০০ লিটার দুধ দিয়ে ঘি, লাবান এবং উন্নতমানের চিজ উৎপাদন করে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ বগুড়া, রাজশাহীতে ব্যবসা করা সম্ভব হচ্ছে। এসইপি প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারী বিএসটিআই, কোয়ালিটি টেস্টিং, ফুড গ্রেড পাত্রে উন্নত প্যাকেজিং এর ফলে তার ব্যাবসায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ফেসবুক পেইজ ও অনলাইন মার্কেটিং এর মাধ্যমে তার পণ্য সারা বাংলাদেশে বিক্রয়ের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী এন্ড এনিম্যাল সাইন্স বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পণ্যগুলোর মধ্যে মার্কেটিং এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে একটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে কুলভ্যান ট্রাক কেনার ফলে এখন পরিবহন খরচ কমে গেছে এবং স্বাধীনভাবে দ্রুত দুগ্ধজাত পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁৗছানো সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে ব্যবসায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০০ লিটার দুধ ক্রয় বিক্রয় হয়ে আসছে। ৩ জন কর্মচারীর মাসিক বেতন ৬০,০০০/= টাকা। এনডিপির এসইপি অগ্রসরের আওতায় ৬,০০,০০০/= টাকার ঋণ নিয়ে কারবারের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। ফলে তার ব্যাবসায় আরও প্রসার লাভ করছে। পরিবেশ সম্মত আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে উন্নত ও নিরাপদ দুগ্ধজাত পণ্য তৈরী করে ভোক্তার কাছে সীমিত লাভে পৌঁছানোর জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়াতে শো রুম করে ব্যাবসা করার স্বপ্ন আল কায়ছারের। যাতে জাতি একটি নিরাপদ ও পুষ্টিকর দুগ্ধপণ্য