
মোঃ আলামিন হোসেন
দি গ্রীন খামারী এগ্রো ফুডস
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার মনিরামপুর গ্রামে মোঃ আলামিন হোসেনের জন্ম। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তার বাবা ছিলেন একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী। বাবার সঙ্গে ব্যবসায়ী কাজে ঘোরাফেরা করার সুবাদে অল্প বয়সেই ব্যবসায়ী মনোভাব গড়ে ওঠে। ৮ম শ্রেনীতে পড়–য়া অবস্থায় খন্ডকালীণ দোকানে চাকুরী করেন, পরে পূর্ণকালীন ৯ বছর চাকুরী করে ব্যবসার খুটিনাটি জেনে মাত্র ৫০০০/— টাকা পুজি নিয়ে সুতার ব্যবসায় আত্মপ্রকাশ করেন। ৫ বছর ব্যবসার করার পর চট্রগ্রামের বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হওয়ায় তার ব্যবসার প্রসার ঘটে। তখন পার্টনার নিয়ে নতুন ব্যবসা হিসাবে বেছে নেন গাভীর খামার ও দুধ সরবরাহের কাজ । ্ঐ সময় কোন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান না থাকায় , মিল্কভিটা ও ঢাকায় বিভিন্ন দোকানে দুধ সরবরাহ করার ফলে অল্প দিনের মধ্যে ব্যাপক লাভবান হন। ব্যবসায়িক অগ্রগতির ফলে , তার সুতার ব্যবসার সমস্ত পুজি নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগের ফলে সুতার ব্যবসাটি বন্ধ করে দেন। আলামিন বাঘাবাড়ীর মিল্কভিটার একজন মডেল খামারী হিসাবে ২০০৮—২০০৯ সালে পুরষ্কৃত হন । তার ব্যবসার প্রসার আরো বেড়ে যাওয়ায়, নিজেই একটি দুধের কারখানা স্থাপণ করেন। পরবর্তীতে ব্যবসায়িক পার্টনারদের অসহযোগিতা এবং পণ্য সরবরাহের জটিলতা কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়। এতে প্রায় এক কোটি টাকার মতো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ফলে খামার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে সমস্ত ঋণ পরিশোধ করেন।
পরবর্তীতে শাহজাদপুর দিলরুবা বাসস্ট্যান্ডে একটি ছোট্ট টিন শেডের ঘর ভাড়া নিয়ে স্বল্প পরিসরে দুগ্ধজাত পণ্য মিল্কসেক এবং লাবাং তৈরীর কাজ শুরু করেন। পূর্বের ব্যবসায়ী অভিজ্ঞতা থাকায় উৎপাদিত লাবাং এবং মিল্কসেক দেশের বিভিন্ন ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে ব্যবসা চালু করেন।
অতঃপর পিকেএসএফ এর সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট — ডেইরী শাহজাদপুর এলাকায় কার্যক্রম শুরু হলে এনডিপি—এসইপি — ডেইরী প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ আব্দুল মালেক আকন্দ ও তার সহকর্মীবৃন্দ উদ্যোক্তা আলামিন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। আলামিন ভাই ডেইরী পণ্য নিয়ে স্বপ্নের কথা জানান। এনডিপি— এসইপি —ডেইরী প্রকল্পের মাধ্যমে ডেইরী উদ্যোক্তারা কিভাবে উপকৃত হতে পারবে সে সম্বন্ধে আব্দুল মালেক আকন্দ জানান, নিরাপদ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের পূর্ব শর্ত পরিবেশ সম্মত উপায়ে দুগ্ধ সংগ্রহ করা । যে সকল ডেইরী পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত উপায়ে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত পণ্য তৈরী করবে এবং তাদের পণ্য উচ্চ মূল্যের বাজার পৌছানোর জন্য ব্রান্ডিং, প্যাকেজিং , লেভেলিং এমনকি ওয়েবসাইডের মাধ্যমে পণ্য প্রিমিয়ার মার্কেটে ভোক্তার চাহিদা তৈরীর কাজ করা যেতে পারে। এমনকি উচ্চ মূল্যের পণ্য যারা তৈরী করেন তাদেরকেও তথ্যগত সহযোগিতার মাধ্যমে পণ্য তৈরীর কাজে সহযোগিতা করা যেতে পারে এবং স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দেওয়া যেতে পারে।
এনডিপি এসইপি —ডেইরী প্রকল্পের অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত থেকে প্রকল্প সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে ৩০০০০০/= ঋণ গ্রহণ করে , বগুড়া হতে দক্ষ কারিগরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে উন্নত মানের পণ্য যেমন ঘি, দই, মিষ্টি , রসমালাই ও সন্দেশ তৈরী করে বর্তমানে ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ , সিলেট এবং যশোরে পাঠাচ্ছেন। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৯ জন কর্মচারী প্রতিদিন প্রায় ৩৫ মণ দুধ হতে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধ পণ্য তৈরী হচ্ছে।তার প্রতিমাসে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকার মূলধন বিনিয়োগ হচ্ছে এবং মাসে তার গড়ে ২০০০০০ হতে ২৫০০০০ লাভ হয়।
আলামিন তার ব্যবসায়িক সফলতার জন্য এনডিপি— এসইপি —ডেইরী প্রকল্পের কর্মকর্তা এবং পিকেএসএফ এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।