মোঃ হায়দার আলী

নাইন স্টার ফুড এন্ড ডেইরী

 

মোঃ হায়দার আলী, পিতা মোঃ ইউসুফ আলী গ্রাম ঃ রামবাড়ী শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ। পিতার ছিল তাঁতের কাপড়ের ব্যবসা। সংসারে হায়দাররা ছিল ৪ ভাই ও ২ বোন । তাদের অভাব অনটন ছিল। হায়দারের বাবার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষিত করা । বাবার আশা পূরণে ছেলে হায়দার চাটার্ড এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টে এমএ পাশ করেন। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে হায়দারকে, স্কুল— কলেজে পড়ার সময় প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা খরচ জোগাড় করতে হয়েছে। যখন ঢাকায় চাটার্ড এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টে পড়াশোনা করেন, তখন নিউমার্কেটের একটি দোকানে সেলসের কাজ করে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর কেয়ার বাংলাদেশ এবং এপেক্সের একটি প্রকল্পে কাজ করেন। সবশেষে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত অবস্থায় বেতন ভাতা না পাওয়ায় সংসার চালাতে ব্যর্থ হয়ে চাকুরী ছেড়ে শাহজাদপুর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। এমতাবস্থায় বেকার জীবন যাপনের এক বিকালে হঠাৎ বন্ধু আলাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়, বন্ধুর সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে দুগ্ধপণ্য মাঠা তৈরী করে বিক্রি করার পরামর্শ দেন । গত মার্চ ২০১২ সালে তিনি এক মণ দুধ দিয়ে মাঠা তৈরী করে প্রায় ২০০ বোতলে ভরে দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে মাঠা বিক্রি করেন কিন্তু কেউ সহজেই তার মাঠা ক্রয় করতে চায় না। কারণ মাঠা তখন বাজারে খোলা অবস্থায় এবং কম দামে পাওয়া যেত । অনেক কষ্টে স্কুল—কলেজের ছাত্রদের মাঝে এক সপ্তাহে ২০০ বোতল মাঠা বিক্রি করতেন। পর্যায়ক্রমে ২ মণ মাঠা ৪০০ বোতলে ভরে শাহজাদপুর উপজেলায় , উল্লাপাড়া, খুকনী, বেলকুচি, বাঘাবাড়ী এবং শাহজাদপুরের বিভিন্ন কনফেকশনারী, মিষ্টির দোকান, স্কুল—কলেজের পাশে মুদি দোকানে মাঠা সরবরাহ করে ব্যবসা শুরু করেন।
২০১৭ সাল থেকে লাবান তৈরী করে বোতলজাত করতে থাকেন। প্রতি পবিত্র রমজান মাসে বাজারে লাবান বিক্রি করায় প্রচারটি দ্রুত বাড়তে থাকে, রমজানে লাবান উৎপাদনের সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যায়। বছরের তিন মাস লাবান বিক্রি কম থাকে। বাকী নয় মাস এ দুগ্ধপণ্যটি বিক্রি হয়।
বিএসটিআই লাইসেন্স, উন্নত মোড়কজাত, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত পাত্রে পণ্যটি সরবরাহ না করায় প্রশাসন থেকে তাকে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হয়। ২০২১ সালে পিকেএসএফ এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) এর বাস্তবায়নে সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি) —ডেইরী আওতায় সদস্য হিসাবে ভর্তি হন। পরবর্তীতে এনডিপি এসইপি ডেইরী ফার্ম প্রকল্পের আওতায় তার কারখানাটি পরিবেশ বান্ধব করে গড়ে তোলা হয়। প্রকল্পের কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতায় তার উৎপাদিত দুগ্ধপণ্যের বিএসটিআই অনুমোদন লাভ করেন, ফলে তিনি এখন নিরাপদে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখন তিনি প্রতিদিন প্রায় ১৬০ লিটার দুধ থেকে ৮০০ বোতল লাবান তৈরী করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেন। কর্মচারীর বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচ বাদে মাসে ৭০০০০—৭৫০০০/= আয় হয়, তার সংসার স্বাচ্ছন্দভাবেই চলছে।
তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানান, তার একটি ফ্রিজিং গাড়ী ক্রয় করার কথা। গাড়ীটা কিনে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, টাঙ্গাইল এলাকা গুলোতে তার উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত দুগ্ধপণ্যটি দেশবাসীকে খাওয়াতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।