শ্রীবাসু চন্দ্র রায়

অরূপ ছানা কারখানা

বাসুদেব ঘোষ এখন সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী পোর্ট এলাকায় একজন সু পরিচিত দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী । প্রতিদিন সাত জন দুধ সরবরাহকারীর মাধ্যমে প্রায় ৭০ – ৮০ মণ দুধ সংগ্রহ করেন । দুধ কারখানায় পৌছানোর পর হতেই ৭/৮ জন কর্মচারী দুধজ¦াল দেওয়া ,ঘি তৈরীকরা ,ছানা কাটা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটান ।
বাসুদেব কে এই ব্যবসায় কিভাবে এলেন জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান, শাহজাদপুর এলাকাতে তার বাড়ি। বাড়িতে গাভী ছিল। তাই ছোট বেলা হতেই গাভী পালনের সঙ্গে থাকতে হতো । বাবার ছিল দুধের ব্যবসা, তিনি বাড়িতে বাড়িতে গাভীর দুধ সংগ্রহ করে মহাজন কে দুধ সরবরাহ করতেন। মাঝে মাঝে বাবার সহযোগী হিসাবে কাজ করতে হতো। মাঝে মাঝে বাবা খুশী হয়ে চারআনা / আটআনা দিতেন। এতে পয়সার প্রতি লোভ জন্মে গেল । বাবার আগ্রহে স্কুলে ভতি র্হলেও পড়াশোনায় মন বসতোনা। পরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি।শুধুমাত্র “বাসু” লিখতে পারায় “বাসুদেব চন্দ্র রায় হয়ে গেলাম শুধ ুবাসু । ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম । এবার ঘি তৈরীর কাজে এক মহাজনের কাছে ৭/৮ মাস থাকলাম। সপ্তাহে ১০০/= এতে আমার চাহিদা পুরণ নাহওয়ায় , মাস্টার রোলে মিল্ক ভিটায় দৈনিক ২৫/টাক াহাজিরায় চাকুরী নিলাম । দুই বছর কাজ করায়, সব স্যারদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরী হলো । তাদের পরামর্শে চাকুরী ছেড়ে মিল্ক ভিটায় দুধ সরবরাহের কাজ নিলাম। বাড়ি বাড়ি হতে দুধ সংগ্রহ করে মিল্ক ভিটায় পৌছানো,সাত দিন পর বিল দেওয়া । বিয়ে হলো। ব্যবসাটা বেশ ভালোই চলছিল, মাঝে রাজনৈতিক পেক্ষাপট পরিবর্তনের জন্য হরতাল অবরোধের কারণে ব্যবসার ক্ষতি হয় । ফলে পূর্ব পরিচিতির কারণে আবার দিন হাজিরা ২২৫/=টাকা করে ঘি তৈরীর কাজে যোগ দেই। এভাবে বেশ ভালই চলছিল । হঠাৎ করে ঢাকায় বদলী করে দেয়। ৩ মেয়ে ১ ছেলে নিয়ে ঢাকায় সংসার চালানো আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল । ঢাকা থেকে পরিবার গ্রামে রেখে যশোরে এক ঘি তৈরীর কারখানায় মাসিক ১৫০০০/= টাকায় চাকুরী নিলাম । কাজে—কর্মে ভাল থাকায়, অল্প দিনের মধ্যেই আমার নাম ছড়িয়ে পড়ল। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো । হঠাৎ একদিন সিলেটের এক ব্যবসায়ী আমাকে প্রস্তাব দিল ,“তুমি ঘি বানাতে জানো, দুধ কিভাবে সংগ্রহ করা হয় জানো তুমি যদি শাহজাদপুরে ঘি তৈরী করে আমার কাছে বিক্রি করো ,আমি কিনবো। আমার টাকা না থাকায়,আমি ব্যবসা করতে পারছিনা জানানোর পর, তিনি আমাকে এক লক্ষ টাকা্ ঋণ হিসাবে দেন । আমি দেশের বাড়িতে এসে মন দিয়ে ব্যবসা করতে লাগলাম। ধীরে ধীরে আজকের এই অবস্থানে এসে পড়েছি।
এই ব্যবসায় এসে পরিবেশের কি কোন উন্নতি করেছেন ? জানতে চাইলে তিনি জানান , এনডিপির এসইপি প্রকল্পের অফিসাররা প্রতিনিয়ত পরিবেশ উন্নয়নের ব্যাপারে কথা বলাতে বাধ্য হয়েই কারখানায় চৌবাচ্চা এবং ড্রেন তৈরী করেছি । এতে আমার ব্যবসা লাভবান হয়েছে । এখন নদীতে গিয়ে আগের মতো ছানা ঠান্ডা করতে হয়না, কাজে্র দিক দিয়ে সুবিধা হয়েছে এবং এনডিপি হতে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহন করতে সুবিধা পেয়েছি।
বর্তমানে লকডাউনে ব্যবসা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সারা বিশে^ এই মহামারীর জন্য ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে। আমরাও এর বাইরেনা । যে পরিমান দুধ নিয়ে আগে কাজ করতাম ,এখন অনেক কমে গেছে । তারপরও সিলেট , ঢাকা , চট্টগ্রামে ছানা ও ঘি পাঠানো হয়। সপ্তাহে এখনও ৪—৫ লক্ষ টাকা ব্যবসা হচ্ছে। তবে আমরা বিশ^াস করি , করোনা আমাদের জীবনেই অংশ। করোনাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
কাজেই করোনার ভয়ে ভীত হয়ে না থেকে, সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে, তিনি জানান, আমার এই কারখানা অনেক বড় হবে, অনেক পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ।